Belief

দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ

দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে শ্রীমদ্ভগবদগীতা পাঠ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটিকে দেশে প্রথমবার এত কণ্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দিরের সামনে এ গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়। গীতার প্রথম অধ্যায়, দ্বাদশ অধ্যায় ও অষ্টাদশ অধ্যায় সমবেত ২০ হাজার কণ্ঠে উচ্চারিত হয়। অনুষ্ঠানে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, নীলফামারীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ভক্ত-পুণ্যার্থীরা যোগ দেন। সেই সঙ্গে বেদমন্ত্র, মহানাম জপসহ পূজা-অর্চনা করা হয়েছে।

এর আগে পতাকা উত্তোলন ও প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপাল। এ সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত রঞ্জন রায়, রাজদেবোত্তর এস্টেটের সদস্য ডা. ডিসি রায়, ভারতে লাখো কণ্ঠে গীতা পাঠ আয়োজনের আহ্বায়ক ড. মানস ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজন ঘিরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণ লক্ষাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সকাল থেকে মানুষজন আসতে থাকেন। দুপুরের মধ্যেই মন্দির ও পাশে ভক্তদের জন্য রাখা খোলা জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সমবেত ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ করে এবং শ্রবণকালে আনন্দ ও জ্ঞান আহরণের কথা জানান আগতরা। 

পার্বতীপুর থেকে আগত যুগল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এর আগে এমন আয়োজন হয়নি। আমরা চাই এই ধরনের আয়োজন প্রতি বছর হোক। যাতে ধর্মের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে।

একই উপজেলা থেকে আসা মাধবী রানী বলেন, এখানে এসেছি ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ শোনার জন্য। ভালো লেগেছে।

রংপুর থেকে আসা ধরিত্রী রানী মোহন্ত বলেন, গীতা পাঠ শুনতে জন্য এসেছি। খুব ভালো লেগেছে এই আয়োজন।

গীতা পাঠে অংশগ্রহণকারী দিনাজপুর সদরের অনিমা রানী সাহা বলেন, আমি এখানে এসে অনেক শান্তি পেয়েছি। ধর্মের জ্ঞান আহরণের জন্য এসেছি, অনেক সাধু-গুরুর চরণ পড়েছে এখানে।

কাহারোল উপজেলার রনজিৎ কুমার রায় বলেন, ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ প্রথম হচ্ছে। আমরা উত্তরবঙ্গবাসী ধন্য। গীতার যে বাণী তা উপলব্ধি করেছি। আমরা প্রার্থনা করি বিশ্বের সব মানুষ সুখী হোক। তীব্র খরা চলছে, ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি বৃষ্টিপাত হয়ে শান্তি বিরাজ করুক।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক তুষার রঞ্জন রায় কেশব বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার সনাতনী ভাই-বোনেরা এবং অন্যান্য ধর্মের লোকজন এসেছেন। রংপুর বিভাগে যারা বেদ ও গীতা পাঠের শিক্ষার্থী তাদের নিয়ে আমাদের আয়োজন। এখানে ২০ হাজার বলা হলেও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। প্রশাসন, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি।

আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব প্রফুল্ল কুমার রায় বলেন, ধর্মীয় চেতনা জাগানোর জন্য এবং এদেশে সব ধর্মগোষ্ঠীর মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারি, সেজন্য এই আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, শ্রীমদ্ভগবদগীতা শ্রীকৃষ্ণের বাণী। ওই সময়ে কুরুক্ষেত্রে যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেটা ছিল ধর্মযুদ্ধ। সে সময়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বুঝিয়েছিলেন যার মধ্য দিয়ে মানব সৃষ্টি এবং মানবতাকে ধরে রাখা, ধর্মকে ধরে রাখা, সত্যকে ধরে রাখা, মানুষের মঙ্গল করা, কল্যাণ করা ধর্মের কাজ। এটা যারা বিনষ্ট করে তারা ধর্মকে নষ্ট করে। গীতা পাঠের মাধ্যমে মানুষের প্রবৃত্তিকে সেভাবে জাগ্রত করা। তারা যাতে সৎপথে চলে ও জনকল্যাণে কাজ করে। ঈশ্বর প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে, জীবের মধ্যে রয়েছে। ধর্ম-বর্ণের মধ্যে ভেদাভেদ থাকতে পারে না। আমরা যাকে ঈশ্বর বলছি অন্যরা তাকে আল্লাহ বলছে, কেউ গড বলছে। সৃষ্টিকর্তা এক, বিজ্ঞানও এটাকে স্বীকার করে। বিজ্ঞান বলছে, একটি মহাশক্তি সব নিয়ন্ত্রণ করে। গীতা পাঠের উপলব্ধিতে সবাইকে ভালোবেসে একটি সুখের পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি আমরা।




Source link

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

You cannot copy content of this page

en_GBEnglish