ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রীষ্মকালীন অবকাশ ৫ থেকে ৯ মে এবং ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদুল আজহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। তবে হঠাৎ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে ঈদুল আজহার সঙ্গে সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুরোধের কারণেই এই ছুটি পেছানো হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের কনফারেন্স কক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সভায় সর্বসম্মতভাবে ছুটি পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে ছুটি পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চলমান তাপদাহের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে গ্রীষ্মকালীন ছুটি পিছিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে।
জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রীষ্মাকালীন অবকাশ ৫ থেকে ৯ মে এবং ১৬ থেকে ২৪ জুন ঈদুল আজহার ছুটি পূর্বনির্ধারিত ছিল। কিন্তু চলমান তাপদাহের কারণে পানি সংকটের আশঙ্কা এবং শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ছুটিসমূহ পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। পুনর্বিন্যাস্ত ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ ৯ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত এবং অফিসসমূহ ৯ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ জুন থেকে পুনরায় ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া গত ২১ এপ্রিল জরুরি সভায় ২ মে ক্লাস বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করা হয়। বিভাগসমূহ প্রয়োজনবোধ করলে ৬ জুন পর্যন্ত অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ষাট হাজারেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামের ফেসবুক গ্রুপে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু গ্রীষ্মের ছুটি ঈদুল আজহার সঙ্গে সমন্বয় করার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের ছুটি, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং ঈদুল আজহার ছুটি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা তিন মাস ভেঙে ভেঙে ছুটির সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে ক্লাস-পরীক্ষার নিয়মিত ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে এবং বারবার বাড়িতে আসা যাওয়া করায় বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পহেলা মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি আছে। এটা যদি ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে সমন্বয় কার যায় তাহলে কেমন হবে বিষয়টা? আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরের শিক্ষার্থীদের সুচিন্তিত মতামত প্রত্যাশা করছি।’
আজ ছুটি পেছানোর খবরটি প্রচার করা হলে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সভাপতির ওই পোস্টটি শেয়ার করে তাকে ধন্যবাদ জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এই ছুটি পেছানোর কথা বলেছিল। এছাড়া আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গ্রুপেও একটা পোস্ট করেছিলাম। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ছুটি পেছানোর পক্ষে মন্তব্য করেছে। পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যাতে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ছুটি পেছানো হয়। তাদের কাছেও হয়তো মনে হয়েছে ছুটি পেছানো দরকার। তাই প্রশাসন এই ছুটিটা ঈদের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করেছে।
তবে ছাত্রলীগের অনুরোধের বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কি সিন্ধান্ত নেওয়ার লোকের অভাব? প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা, অনুষদের ডিনদের মতামতের ভিত্তিতেই ছুটি পেছানো হয়েছে। কারও অনুরোধে পেছানো হয়নি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।