‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
রাজবাড়ীতে ফেসবুকে সুইসাইড নোট লিখে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সোয়া ৮টার দিকে রাজবাড়ীর সোনাকান্দর ঘাট এলাকার পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ওই শিক্ষার্থীর নাম পিউ কর্মকার। পিউ রাজবাড়ী শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার কৃষ্ণপদ কর্মকারের মেয়ে। রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে পিউ ছিলেন মেজো।
ফেসবুকে দেওয়া সুইসাইড নোটে ওই শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘গুচ্ছ আমার শেষ ভরসা ছিল। জানি না কবে রেজাল্ট দেবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিল, একটা আশা ছিল। কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিলো না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি আর ইংরেজির বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভুল করে। আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলার। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি থেকে একটু একটুর জন্য ধাক্কা খাই। জানি এটাও ভাগ্যের জন্য। চেষ্টা আমার কম ছিল না। সারা দিনরাত এক করে পড়তাম। বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে। কিন্তু আমি কিছু দিতে পারি নাই। দাদার ইচ্ছা ছিল আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিল ছোট থেকেই ডাক্তার হবো। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল, মেডিকেল এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করি। কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারি নাই। এটা থেকেও বিশাল একটা ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। তাও হাল ছাড়ি নাই। এই অ্যাডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিছে আমাকে।’
পোস্টের শেষের দিকে হতাশার কথা উল্লেখ করে পিউ লিখেছেন, ‘সারাটা দিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড, কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাই নাই। হয়তো আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ পাশে থাকলে আজকে এই মৃত্যুটা হইতো না। আমার মৃত্যুর জন্য আমার বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা-মায়ের স্বপ্নপূরণ করতে পারি নাই।’
পোস্টের শেষে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে এই তরুণী আরও লিখেছেন, ‘মায়ের কাছে গিয়ে মাঝে মধ্যে কাঁদতাম, মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমাকে শেষ বারের মতো দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই, ভালো থাইকো সবাই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারছি না। আমারে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছি না আর।’
পিউয়ের চাচি জানান, পিউ বুধবার বিকালের দিকে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও বাড়িতে ফিরে আসেনি। এরপর ফেসবুকে পিউয়ের আইডিতে সুইসাইড নোট দেখতে পাওয়া যায়। রাত সোয়া ৮টার দিকে সোনাকান্দর ঘাট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। দ্রুত রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।